শিং ও মাগুর মাছ চাষের সুবিধা* বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় শিং ও মাগুর মাছ চাষ করে প্রচুর মুনাফা পাওয়া যায়।চাষ পদ্ধতি সহজ। যে কোনো ধরনের জলাশয়ে এমনকি চৌবাচ্চা ও খাঁচাতে ও চাষ করা যায়।* প্রতিকূল পরিবেশে যেমন-অক্সিজেন স্বল্পতা, পানির অত্যাধিক তাপমাত্রা, এমনকি পচা পানিতেও এরা বেঁচে থাকে।* অল্প পানিতে ও অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়।* রোগবালাই খুব কম হয় ও অধিক সহনশীল।* অল্প পানিতে এমনকি পানি ছাড়াও এরা দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকে বলে জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়।* সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে অল্প সময়েই (৬-৭ মাস) বাজারজাত করার উপযোগী হয়।* একক চাষ ছাড়াও অন্যান্য কার্প মাছ, তেলাপিয়া মাছের সাথে পুকুরে মিশ্র চাষ করা যায়।
স্থান নির্বাচন ও পুকুরের বৈশিষ্ট্য* ব্যবস্থাপনা সুবিধার জন্য পুকুর আয়তকার হতে হবে* পুকুরের আয়তন ২০-৫০ শতাংশের মধ্যে হলে ব্যবস্থাপনা করতে সুবিধা হয়, তবে পুকুরের আয়তন ১০০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না* পুকুরের গড় গভীরতা ৪.৫-৫.৫ ফুট হলে ভাল হয়, যেখানে বৎসরে ৬-৮ মাস পানি থাকে।* বন্যামুক্ত ও বসতবাড়ীর আশে পাশে।
পুকুর প্রস্তুতি* প্রথমে পুকুরকে সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলা প্রয়োজন। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট গভীরতার জন্য ১৮-২৫ গ্রাম রোটেনন পাউডার দিয়ে সব ধরনের মাছ অপসারণ করা যায়।* রোটেনন প্রয়োগের ২-৩ দিন পর শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। তবে চুন ছাড়াও জিওলাইট (প্রতি শতকে ১ কেজি) পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।* উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি তথা প্রাকৃতিক খাদ্যে বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পুকুর প্রস্তুতির শেষ ধাপে সার প্রয়োগ করা হয়। চুন প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর শতকে ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৫০-৭৫ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করা হয়।
পোনা মজুদ* পুকুরে সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর ২-৩ ইঞ্চি সাইজের একক চাষের জন্য প্রতি শতাংশে ২৫০ টি মাগুর ও ৪০০ টি শিং দেওয়া যেতে পারে।* তবে মিশ্র চাষে শতাংশে মাগুর ১৫০ টি ও শিং ২০০ টি ছাড়তে হবে।* একই সাথে ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে নিবিড় শিং-মাগুর চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ৩-৫ টি কাতলা মাছের পোনা ছাড়া যেতে পারে।* শিং-মাগুর চাষ শুরু করার আদর্শ সময় এপ্রিল – মে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা* পোনা মজুদের পরের দিন থেকে মাছকে তার দেহ ওজনের ১০-১২ ভাগ দৈনিক খাবার দিতে হবে। দিনে দু বেলা হলে সকালে একবার অর্ধেক বিকালে অর্ধেক।* প্রতি ১৫ দিন অন্তর খাদ্য প্রয়োগের হার ১% করে কমাতে হবে।* মাছের ওজন ৫০ গ্রামের উর্ধ্বে উঠলে খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ হবে তার দেহ ওজনের শতকরা ৫ ভাগ।* শিং মাগুর মাছের চাষের ক্ষেত্রে ৩৫-৪০% প্রাণিজ প্রোটিন সমৃদ্ধ পিলেট খাদ্য ব্যবহার অপরিহার্য।* বাজরে শিং, মাগুরের আলাদা খাদ্য পাওয়া যায় অথবা পাংগাস ফিড গ্রোয়ার-১ দেয়া যেতে পারে।* ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে পানির তাপমাত্রা আসলে শিং-মাগুর খাদ্য গ্রহন কমিয়ে দেয় এবং ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসলে খাদ্য গ্রহন বন্ধ করে দেয়।
শিং ও মাগুর মাছের রোগ ও প্রতিকারমাছ নিয়মিত বাড়ছে কিনা এবং মাছ রোগাক্রান্ত হচ্ছে কিনা জাল টেনে মাঝে মাঝে তা পরীক্ষা করতে হবে।শিং ও মাগুর মাছে সাধারণত কোনো রোগ হয় না। তবে মাঝে মাঝে শীতকালে ক্ষত রোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ এবং পেট ফোলা রোগ দেখা যায়।ক্ষত রোগ: ৫০০ গ্রাম চুন + ৫০০ গ্রাম লবনলেজ বা পাখনা পচা রোগ: প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পারমেঙ্গানেট মিশ্রিত করে আক্রান্ত মাছকে ৩-৫ মিনিট গোসল করাতে হবে।পেট ফোলা রোগ: রেনামাইন/একুয়ামাইসিন + ভিটা টেক-সি
অন্যান্য ব্যবস্থাপনা* বেড়া/নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন: বর্ষায় নতুন পানি এলে শিং-মাগুর মাছ পাড় বেয়ে চলে যেতে পারে। তাই পোনা মজুদের এক মাসের মধ্যে পুকুরের পাড়ের উপরিতলে মজবুত করে ৩ ফুট উঁচু বেড়া/বেষ্টনি দিয়ে পুকুর হতে শিং-মাগুর মাছ বেরিয়ে যাওয়া রোধ করতে হবে। কিছু কিছু খামারে স্বল্প মূল্যের টিন দিয়েও বেড়া দিতে দেখা যায়। এসব স্বল্প মূল্যের টিন ২-৩ বছর টিকে থাকে।* পুকুরের পানি ভালো রাখার জন্য ১৫ দিন পর পর হররা টেনে দিতে হবে।* চাষকালীন সময়ে শামুকের আধিক্য পরিলক্ষিত হলে শতাংশ প্রতি ১০০-২০০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগে শামুকের আধিক্য কমবে।* মাসে ১ বার ২০-২৫% পানি পরিবর্তন করতে হবে।* অ্যামোনিয়া গ্যাস দূর করার জন্য অ্যামোনিল (প্রতি একরে ২০০ মি.লি.) ব্যবহার করতে পারেন।
আহরণ ও বিক্রয়* শিং ও মাগুর মাছের চাষ পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরন করা হলে ৬-৭ মাসে বাজারজাতকরনের উপযোগী হয়। এ সময় শিং মাছের গড় ওজন ৭৫-১০০ গ্রাম এবং মাগুর মাছের গড় ওজন ৯০-১০০ গ্রাম হয়ে থাকে।* হিসেব করে দেখা গেছে যে, এক বিঘার একটি পুকুরে শিং ও মাগুর চাষ করে ৯০,০০০/- লাভবান হওয়া যায়।*** বিস্তারিত জানার জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন।