টবে বা জমিতে কলমি শাক চাষ পদ্ধতি

কলমি একটি পাতা জাতীয় গ্রীষ্মকালীন শাক। প্রায় সব ধরণের মাটিতেই কলমি শাক শাক চাষ করা যায় । এটি সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে চৈত্র (মধ্য মার্চ-মধ্য এপ্রিল) থেকে শুরু করে  শ্রাবণ (মধ্য জুলাই-মধ্য আগস্ট) পর্যন্ত বীজ বপনের উওম সময়।

জাত:- জলাশয়ে জন্মানো কলমি শাক স্থানীয় জাতের। এর উৎপাদন কম। তাই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৮৩ সালে একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। নাম গিমাকলমি-১। এর ফলন বেশ ভালো।

টবে চাষ পদ্ধতি:- অপেক্ষাকৃত কম গভীরতার পাত্র কলমি শাক চাষের জন্য ভাল। ছাদ বা ব্যালকনিতেও কলমি চাষ করা যায়। প্রথমে টব নিচে ছিদ্র করে নিতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে। টবের তলার ছিদ্র ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে । এখন ২ ভাগ দোআঁশ কিংবা বেলে- দোআঁশ মাটি এবং ১ ভাগ গোবর একত্রে মিশিয়ে টব ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ৭-৮ দিন । সাত-আট দিন পর পূণরায় মাটি খুচিয়ে দিতে হবে। মাটি যখন খুব ঝুরঝুরে হবে তখন কলমি শাকের বীজ বপন করতে হবে । সবচেয়ে ভাল হয় ৫-৬ ইঞ্চি দূরত্বে একসংগে ১০-১২টি করে বীজ বপন করা । বীজ বপনের পর হালকা পানি দিতে হবে। কলমি শাক অর্ধজলজ উদ্ভিদ হলেও টবে কলমি চাষে কম পানি দেয়া ভাল। তাতে কলমি শাক সোজা এবং শক্ত থাকবে।

জমিতে চাষ পদ্ধতি

জমি তৈরি ও বীজ বপন

প্রথমে ৫-৬ টি চাষ এবং মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। লাইন করে এবং ছিটিয়ে উভয় পদ্ধতিতে বীজ বোনা যায়। তবে লাইনে বীজ বপন করলে যত্ন নিতে সহজ হয়। লাইন হতে লাইনের দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার (৮ইঞ্চি) এবং বীজ হতে বীজের দূরত্ব হবে ১৫ সেন্টিমিটার (৬ ইঞ্চি)। এক সাথে অন্তত ২টি বীজ বোনা ভালো। তবে একাধিক চারা জন্মালে ১টি রেখে বাকিগুলো কেটে দিতে হবে। শতাংশপ্রতি বীজ প্রয়োজন হবে প্রায় ৪০-৫০ গ্রাম।
 

সার ব্যবস্থাপনা

ভাল ফলন পেতে প্রয়োজন সুষম সার ব্যবহার। মাটির উর্বরতা বিবেচনা করে সার দিতে হয়। এজন্য মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সার দেয়া উত্তম। আর তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে স্বভাবিক মাত্রায় দিতে হবে। শতাংশপ্রতি যে পরিমাণ সার প্রয়োজন তা হলো- ইউরিয়া ৫৬০- ৬৫০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০-৪৯০ গ্রাম, এমওপি ৪০০-৪৯০ গ্রাম এবং জৈব সার ৩২-৪০ কেজি। ইউরিয়া বাদে বাকি জৈব ও অজৈব সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। প্রতিবার পাতা সংগ্রহের পর ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
 

আগাছা দমন

কলমি শাকের জমিতে আগাছা বাড়তে দেয়া যাবে না, কারণ আগাছা ফসলের খাবারে ভাগ বসায়, এছড়া আগাছা রোগ পোকার আশ্রয়স্থল।

সেচ ব্যবস্থাপনা

শুষ্ক মৌসুমে জমিতে অবশ্যই সেচ দিতে হবে, বর্ষাকালে সেচের প্রয়োজন হবে না তবে অনাবৃষ্টি হলে সেচ দিতে হবে।

রোগ-বালাই ব্যস্থাপনা

কলমি শাকে রোগ-পোকা তেমন হয় না বললেই চলে। তবে কিছু পোকার আক্রমণ হতে পারে। যেমন বিটল, বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা। এসব পোকা দেখা দিলে হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলতে হবে। তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে দমন করতে হবে। জমি বেশি স্যাঁতসেঁতে থাকলে গোড়া পচে যেতে পারে।  ড্যাম্পিং অফ রোগের কারণে এমনটা হয়। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ

বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে শাক সংগ্রহের উপর্যুক্ত হয়। প্রথম সংগ্রহের ৮-১০ দিন পরপর পাতা তোলা যাবে। শতাংশ প্রতি গড় ফলন প্রায় ১৬০-১৮০ কেজি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *