থাই সরপুঁটি চাষ

থাই সরপুঁটি চাষের সুবিধা* এরা অতি দ্রুত বর্ধনশীল ও সুস্বাদু।* পতিত জলাশয়, ডোবা, ছোট বড় সবধরনের পুকুর ও দীঘিসহ সকল ধরনের জলাশয় এমনকি যেখানে বছরে ৩-৪ মাস পানি থাকে সেসব জায়গায়ও থাই সরপুঁটি চাষ করা যায়।* ঘোলা পানিতেও থাই সরপুঁটির চাষ করা যায়।* অল্প সময়, স্বল্প শ্রম ও স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভ।* এরা প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি পছন্দ করে।* প্রতিকূল পরিবেশেও এরা টিকে থাকে। তুলনামূলকভাবে কম অক্সিজেন ও বেশী তাপমাত্রাযুক্ত পানিতে টিকে থাকতে পারে।বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ থাই সরপুঁটির জন্য খুবই উপকারী।* এ মাছের রোগ বালাই কম।* থাই সরপুঁটি মাত্র ছয় মাসেই বাজারজাতকরণ উপযোগী ১০০-১৫০ গ্রাম ওজনের হয়। ফলে বছরে দুই বার চাষ করা যায়।

স্থান নির্বাচন ও পুকুরের বৈশিষ্ট্য* পুকুর রৌদ্র আলোকিত খোলামেলা জায়গায় হাওয়া উত্তম এবং পাড়ে ঝোপ- জঙ্গল থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। পাড়ে বড় গাছপালা থাকলে সেগুলোর ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে এবং দিনে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা রৌদ্রালোক পড়া নিশ্চিত করতে হবে।* ব্যবস্থাপনা সুবিধার জন্য পুকুর আয়তকার হতে হবে* পুকুরের আয়তন ১৫-৩০ শতাংশের মধ্যে হলে ব্যবস্থাপনা করতে সুবিধা হয়, তবে পুকুরের আয়তন ৫০ শতাংশের বেশি না হওয়াই উত্তম।* পুকুরের গড় গভীরতা ৪.৫-৫.৫ ফুট হলে ভাল হয়, যেখানে বৎসরে ন্যূনতম ৫-৬ মাস পানি থাকে।* বন্যামুক্ত ও বসতবাড়ীর আশে পাশে।


পুকুর প্রস্তুতি* প্রথমে পুকুরকে সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলা প্রয়োজন। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট গভীরতার জন্য ১৮-২৫ গ্রাম রোটেনন পাউডার দিয়ে সব ধরনের মাছ অপসারণ করা যায়।* পুকুরের তলায় কাদা হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকলে হালকা করে কিছু বালি (দালান-কোঠা নির্মাণের জন্য যে বালু ব্যবহৃত হয়) ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে। এর ফলে পুকুরের তলায় গ্যাস হবে না, পানি পরিষ্কার এবং পরিবেশ ভাল থাকবে।* রোটেনন প্রয়োগের ২-৩ দিন পর শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। তবে চুন ছাড়াও জিওলাইট (প্রতি শতকে ১ কেজি) পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।* উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি তথা প্রাকৃতিক খাদ্যে বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পুকুর প্রস্তুতির শেষ ধাপে সার প্রয়োগ করা হয়। চুন প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর শতকে ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৫০-৭৫ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করা হয়।পোনা মজুদ* সার প্রয়োগের সাত দিনের মধ্যে পুকুরের পানির রং হালকা সবুজাভ রং ধারণ করলে শতাংশ প্রতি ৪-৬ সে.মি. আকারের ৮০-১০০টি থাই সরপুঁটির পোনা মজুদ করতে হবে।* মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ১০-১৫টি কার্প জাতীয় মাছের পোনা মজুদ করা যেতে পারে।* পরিবহন জনিত কারণে পোনার শরীরে ক্ষত হতে পারে তাই বালতিতে ১০ লি. পানি নিয়ে এর মধ্যে ২০০ গ্রাম খাবার লবণ অথবা ১ চা চামচ KMnO4 মিশাতে হবে। অতঃপর বালতির উপর একটি ঘন জাল রেখে তার মধ্যে ২০০-৩০০টি পোনা ছাড়তে হবে।* যদি সম্ভব হয় পোনা ছাড়ার সময় থেকে ৫-৬ ঘন্টা পুকুরে হালকা পানির প্রবাহ রাখতে হবে।


খাদ্য ব্যবস্থাপনা* পোনা ছাড়ার পর দিন থেকে পুকুরে মজুদকৃত মাছের দেহ ওজনের ৪-৫ ভাগ হারে চালের কুঁড়া দৈনিক ২ বার খাবার হিসেবে দিতে হবে।* চালের কুঁড়ার পাশাপাশি এ মাছের প্রিয় খাবার ক্ষদিপানা বা নরম ঘাস পরিমাণমত পুকুরে সরবরাহ করলে ভাল উৎপাদন পাওয়া যাবে।* পুকুরে পরিমিত প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির জন্য ১৫ দিন পর পর শতাংশ প্রতি ৫০-৭৫ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২৫-৩৫ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে।


থাই সরপুঁটির রোগ ও প্রতিকার* মাছ নিয়মিত বাড়ছে কিনা এবং মাছ রোগাক্রান্ত হচ্ছে কিনা জাল টেনে মাঝে মাঝে তা পরীক্ষা করতে হবে।* ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া, ফাংগাস জনিত কোন রোগ যেন না হয় তার জন্য আগে থেকেই প্রতি শতাংশ ১ গ্রাম হারে Timsen (টিমসেন) ১৫ দিন পর পর ব্যবহার করতে হবে।ক্ষত রোগ: ৫০০ গ্রাম চুন + ৫০০ গ্রাম লবন
ক্ষত রোগের প্রাদুর্ভাব হলে পুকুরে জীবানুনাশক (টিমসেন – ৮০ গ্রাম/বিঘা (১ম ডোজ) ও ৫০ গ্রাম/বিঘা (২৪ ঘন্টা পর ২য় ডোজ) ব্যবহার করতে হবে। একই সাথে এন্টিবায়োটিক হিসাবে ২ গ্রাম অক্সিটেট্রাসাইক্লিন প্রতি কেজি খাবারের সাথে মিশিয়ে ৭ দিন প্রয়োগ করতে হবে ।


অন্যান্য ব্যবস্থাপনা* পুকুরের পানি ভালো রাখার জন্য ১৫ দিন পর পর হররা টেনে দিতে হবে।* চাষকালীন সময়ে শামুকের আধিক্য পরিলক্ষিত হলে শতাংশ প্রতি ১০০-২০০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগে শামুকের আধিক্য কমবে।* অ্যামোনিয়া গ্যাস দূর করার জন্য অ্যামোনিল (প্রতি একরে ২০০ মি.লি.) ব্যবহার করতে পারেন।* মাছ নিয়মিত খাবার খায় কিনা সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।* ক্ষত রোগ থেকে মাছকে মুক্ত রাখতে প্রতি মাসে একবার পুকুরে জিওলাইট অথবা চুন দিতে হবে (শতকে ২০০ গ্রাম)।* ১৫ দিনে একবার নমুনা সংগ্রহ করে গড় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে মোট খাদ্যের পরিমাণ ঠিক করে নিতে হবে।* প্রতি ১৫ দিনে একবার প্রোবায়োটিক ব্যবহার করলে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ও পানির পরিবেশ ভাল থাকবে।* এক পুকুরের জাল অন্য পুকুরে ব্যবহারের আগে ভাল পানির সাথে জিবাণু নাশক পটাশ মিশিয়ে পরিষ্কার করে নিন।* গ্রীষ্মকালে অনেক সময় পুকুরের পানি কমে যায় এবং তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তখন অনেক সময় পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। এরকম পরিস্থিতিতে খাবার প্রয়োগ কমিয়ে দিতে হবে।* একটানা মেঘলা আবহাওয়ায় কিংবা অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে অথবা একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে।* অনেক সময় বক, মাছরাঙা, জলজ পাখি থেকে রোগ জীবাণুর সৃষ্টি হয়। তাই পুকুরের চারদিকে রঙিন ফিতা টানিয়ে দিন।আহরণ ও বিক্রয়* ৫-৬ মাসে মাছের গড় ওজন ১৫০-২০০ গ্রাম হলে জাল টেনে সব মাছ ধরে বিক্রয় করতে হবে।* ২৫ শতাংশ পুকুরে থাই সরপুঁটি চাষে ছয়মাসে ৯০০০ টাকা খরচ হয়। মাছ বিক্রয় ২০০০০/-, সুতরাং নীট লাভ হয় ১১০০০/-


*** বিস্তারিত জানার জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *