ছাদবাগানে ডুমুর চাষ পদ্ধতি


ডুমুর মূলত মধ্যপ্রাচ্যের ফল। ডুমুরকে আরবিতে তীন বলা হয়। যার ইংরেজি নাম Fig এবং বৈজ্ঞানিক নাম Fiscus carica. বর্তমানে বাংলাদেশে মিশরীয় মিষ্টি ডুমুর চাষ করা করা হচ্ছে। এটি টবেও লাগানো যায়। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ রং ধারণ করে। তবে পাকলে ধীরে ধীরে বেগুনী রং ধারণ করে। এই ফল নরম ও মিষ্টি স্বাদের।
.
ডুমুরের জাতঃ
.
ডুমুরের অনুমোদিত কোনো জাত নাই। তবে বাংলাদেশে গ্রামে-গঞ্জে যে ডুমুরের যে গাছগুলো হয় সে ডুমুরগুলো হলো জগডুমুর। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ficus racemosa। জগডুমুরের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। কোনোটি বিশ-ত্রিশ গ্রাম, আবার কোনোটি পঞ্চাশ-ষাট গ্রাম ওজনের হয়। পাকলে কোনোটি লাল, আবার কোনোটি হলুদ রং ধারণ করে।
.
এছাড়াও আরেক প্রজাতির মূল্যবান ডুমুর আছে, যেটিকে মিশরীয় ডুমুর (Egyptian Ficus) বলা হয়। এটি খুব রসালো ফল ও অনেক বড় হয়। এটি দু’ভাবে খাওয়া যায়। একটি হলো কাঁচায় সরাসরি খাওয়া। অন্যটি হলো রোদে শুকিয়ে কাঁচের কন্টেইনারে রেখে সারা বছর খাওয়া।
.
বাউ জামপ্লাজম সেন্টারে মিশরীয় ডুমুরের চাষ করা হয়ে থাকে যার পাঁচটি জাত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে একটি নিউইয়র্কের ভ্যারাইটি, একটি ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যারাইটি ও দু’টি পাকিস্তানের ভ্যারাইটি।
.
ডুমুরের বংশবিস্তারঃ
.
ডুমুরের বংশবিস্তার করার সবচেয়ে সহজ ও ভালো পদ্ধতি হলো কাটিং । কাটিং পদ্ধতিতে বংশবিস্তারে সফলতার হার বেশি থাকে। কেননা কাটিং করার এক মাসের মধ্যেই চারা মূল টবে লাগানোর উপযুক্ত হয় । ডুমুরের কাটিং করা চারা টবে লাগানোর ৪-৫ মাসের মধ্যেই ফল ধরে।
.
মিশরীয় ডুমুরের চাষ পদ্ধতিঃ
.
মিশরীয় ডুমুরের চারা লাগানোর জন্য ১২-২০ ইঞ্চি মাটির টব বা কালার ড্রাম সংগ্রহ করতে হবে। ড্রামের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে। ড্রাম বা টবের তলার ছিদ্রগুলো ছোট ছোট ইটের টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। ড্রাম বা টবের গাছটিকে ছাদের এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে রোদ সবসময় থাকে। এবার ২ ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি, গোবর ১ ভাগ, টিএসপি ২০-৪০ গ্রাম, পটাশ ২০-৪০ গ্রাম এবং হাড়ের গুড়া ২০০ গ্রাম একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টবে পানি দিয়ে ১০-১২ দিন রেখে দিতে হবে । অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন একইভাবে রেখে দিতে হবে । মাটি যখন ঝুরঝুরে হবে তখন একটি সবল সুস্থ মিশরীয় মিষ্টি ডুমুরের কাটিং চারা উক্ত টব বা ড্রামে রোপন করতে হবে । চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে । সেই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে দিয়ে মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে । যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশি পানি ঢুকতে না পারে । একটি সোজা কাঠি দিয়ে গাছটিকে বেধে দিতে হবে । চারা লাগানোর পর প্রথমদিকে পানি কম দিতে হবে । আস্তে আস্তে পানি বাড়াতে হবে । লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে আবার বেশি শুকিয়েও না যায় ।
.
ডুমুর চাষের ক্ষেত্রে পরিচর্যাঃ
.
অন্যান্য ফল গাছের তুলনায় ডুমুর গাছে খুব দ্রুত ফল ধরে। একটি ডুমুরের কাটিং চারা লাগানোর ৪/৫ মাস পর থেকেই ফল দিতে শুরু করে । তাই গাছ লাগানোর ২-৩ মাস পর থেকেই টবের গাছকে নিয়মিত অল্প অল্প করে সরিষার খৈল পচা পানি দিতে হবে । সে অনুযায়ী ১০-১৫ দিন পর পর সরিষার খৈল পচা পানি প্রয়োগ করতে হবে । সরিষার খৈল গাছে দেওয়ার কমপক্ষে ১০ দিন আগেই পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে । পরে সেই পচা খৈলের পানি পাতলা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে । ১ বছর পর টবের আংশিক মাটি পরিবর্তন করে দিতে হবে । ২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৬ ইঞ্চি গভীরে শিকড়সহ মাটি ফেলে দিয়ে নতুন সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে তা ভরে দিতে হবে। টবের মাটি পরিবর্তনের কাজটি সাধারণত শীতের আগে ও বর্ষার শেষ করাই ভালো হয় । টব বা ড্রামের মাটি ১০-১৫ দিন পর পর কিছুটা খুঁচিয়ে দিতে হবে।
.
ডুমুর ফলের ব্যবহারঃ
.
ডুমুর ফলের উপরের আবরণ খুব পাতলা ও নরম । খেতে খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি । পাকা ফল আবরণ সহ সরাসরি খাওয়া যায় । তাছাড়াও পাকা ডুমুর দিয়ে জ্যাম, জ্যালি, চাটনি ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায় । পাকা ডুমুর শুকিয়ে বিভিন্ন রকমের খাবারের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা যায় । কাঁচা ডুমুর তরকারী হিসেবে খাওয়া যায় ।
.
পুষ্টি উপাদানঃ
.
ডুমুরে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ছাড়াও প্রায় সব রকমের জরুরি নিউট্রিশনস যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম ইত্যাদি আছে। ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাবজনিত রোগে এটি বেশ কার্যকরী। কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ফ্যাট,প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ডুমুর । পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ডুমুরের অনেক ঔষধী গুণও রয়েছে ।
.
রোগ নিরাময়ে ডুমুরঃ
.
ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে। ডুমুর দেহের ওজন কমানো, পেটের সমস্যা দূর করা এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখাসহ নানা উপকার করে থাকে। মৃগীরোগ, প্যারালাইসিস, হৃদরোগ, ডিপথেরিয়া, প্লীহা বৃদ্ধি ও বুকের ব্যথায় ডুমুর কার্যকরী। ডুমুর শরীরে এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। শরীরে পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ডুমুর পাতা ডায়াবেটিক রোগীদের ইনসুলিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালের নাশতার সঙ্গে ডুমুরের পাতার রস খেতে হবে। ডুমুর ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ডুমুর গাছের কষ পোকার কামড় বা হুল ফুটানো ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী।
.
আপনাদের বাগান সম্বলিত যেকোন সমস্যার সমাধান ও জিজ্ঞাসার জন্য কমেন্টে আপনার গাছের ছবিসহ আপনাদের সমস্যাগুলো উল্লেখ করুন, আমি পেজে পরবর্তীতে পোষ্ট আকারে সমাধানগুলো দিয়ে দিবো। ধন্যবাদ

বিঃদ্রঃ- গাছ সম্পৃক্ত তথ্য গুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *