শোল মাছ চাষ পদ্ধতি

শোল মাছ আমাদের দেশে এখন প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতীর মাছ র হয়ে যাচ্ছে। শোল মাছ বাজারের দামি মাছ। শোলের দাম কেজিপ্রতি তিনশ’ টাকার কম নয় অথচ তা চাষে খরচ খুবই নিন্ম। শোল মাছ সব ধরনের দুর্যোগ যেমন খরা, অতিবৃষ্টি কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতি সবকিছু সহ্য করতে পারে- যা অন্য মাছের জন্য কঠিন। মা শোল মাছই নিজেদের মতো করে ডিম নার্সিং ও পোনা লালন করে। শত্রু মাছের কবল থেকে নিজেই ঠেকায়।
পুকুর প্রস্তুতি: পুকুরে শোল মাছ চাষ করার জন্য প্রথমে আপনাকে পুকুরের পানি সম্পূর্ণ শুকয়ে নিতে হবে । এর পরে দেখা যাবে পুকুরের তলায় এক ধরনের ঘাস জন্মে । এই ঘাস জন্মানোর পরে পুকুর পানি দিয়ে ভরাট করতে হবে। এরপর পানির নীচে এসব ঘাস ধীরে ধীরে বড় হতে থাকবে এবং পরবর্তীতে শোল মাছ এই ঘাসের নিচে আশ্রয় নেয়। যেই পুকুরে শোল চাষ হবে সেই পুকুরে কচুরীপানা অথবা কলমি লতা থাকলে ভাল কারন শোল মাছ আড়ালে আবডালে থাকতে পছন্দ করে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কচুরীপানায় যেন পুকুর ভরে না যায়। পুকুরের চারদিকে কমপক্ষে ৫ ফুট উচ্চতায় জাল দিয়ে বেড় দিত হবে। অন্যথায় বর্ষাকালে শোল মাছ লাফিয়ে চলে যাবে।


পোনা মজুদ: বাংলাদেশে বানিজ্যিক ভাবে শোল মাছের চাষ হয় না সেজন্য শোল মাছের পোনা পাওয়া দুষ্কর। তাই প্রাকৃতিক ভাবে সংগ্রহের উপর জোর দিতে হবে। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শোল মাছের পোনা উৎপাদন করা খুবই সহজ। বৈশাখ মাস শোল মাছের প্রজনন মৌসুম। বৈশাখ মাসের প্রথম থেকে শোল মাছ বাচ্চা দিতে শুরু করে। বাচ্চাগুলো এক ঝাঁকে থাকে। সেই সময় হাওড়-বাওড়, পুকুর থেকে সপ্তাহখানেক বয়সের বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। যদি পোনা না পাওয়া যায় তাহলে বড় শোল মাছ সংগ্রহ করে পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।  একক ভাবে প্রতি শতাংশে ১০ টি দেয়া যেতে পারে আর মিশ্র পদ্ধতিতে চাষের জন্য প্রতি শতাংশে ৪টি । একটি প্রাপ্ত বয়স্ক শোল মাছ লম্বায় ২.৫-৩ ফিট হতে পারে। চৌবাচ্চায় বা ফাইবারের ট্যাংকিতে এই মাছ চাষ করা যাবে।


খাদ্য ব্যবস্থাপনা: শোল মাছ সাধারনত খৈল বা কুড়া দিয়ে বানানো খাবার খায় না। ছোট মাছই এর প্রধান খাদ্য। পোনা মাছের প্রিয় খাদ্য শুটকির গুঁড়ো তাই পোনা মাছকে খাবার হিসেবে চিংড়ি শুটকি ভালভাবে গুঁড়ো করে দিতে হবে। এভাবে নার্সারি পুকুরে ১৫ দিন খাওয়ানোর পর পোনাগুলো প্রায় ২/৩ ইঞ্চি সাইজ হবে। ২/৩ ইঞ্চি পোনা মজুদের পর খাদ্য হিসেবে কার্প জাতীয় মাছের ধানীপোনা দেয়া যেতে পারে সাথে ছোট ছোট ব্যাঙ বা ব্যাঙাচি দেয়া যেতে পারে। এরপর পোনাগুলোকে চাষের জন্য অবমুক্ত করতে হবে। আর বড় মাছের জন্য ছোট ছোট মাছ, তবে মরা টাটকা মাছ খেতে দিলে এরা খুব খায়।


রোগ বালাই: শীতকালে শোল মাছে ক্ষত রোগ দেখা দেয়। রোগাক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে তাৎক্ষণিকভাবে তুলে ফেলতে হবে। ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম লবণ গুলে লবণমিশ্রিত পানিতে রোগাক্রান্ত মাছ পাঁচ থেকে দশ মিনিট ডুবিয়ে রেখে অত:পর পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে। এ রোগ নিরাময়ের জন্য ৭-৮ ফুট গভীরতায় প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন ও ১ কেজি হারে লবণ প্রয়োগ করা হলে আক্রান্ত মাছ দুই সপ্তাহের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করে।ক্ষত রোগে আক্রমণের আগেই প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শেষে কিংবা কার্তিক মাসের প্রথম দিকে পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন ও ১ কেজি হারে লবণ প্রয়োগ করা হলে সাধারণত আসন্ন শীত মৌসুমে ক্ষত রোগের কবল থেকে মাছ মুক্ত থাকে।

আহরণ ও বিক্রয়: ৬ মাসে এক একটি শোল মাছের ওজন ৭০০-১০০০ গ্রামের হয়ে থাকে।


*** বিস্তারিত জানার জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *