জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ নগরে বসবাস করে। ১৯৫০ সালে এর হার ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। ভবিষ্যতে নগরমুখী মানুষের স্রোত আরো বেগবান হবে। ২০৫০ সালে পৃথিবীর প্রায় ৬৬ শতাংশ লোক নগরে বসবাস করবে। ততদিনে আরও অনেক শহর ও মেগা শহর গড়ে উঠবে। তাই বর্তমান নগরগুলোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে। অতিরিক্ত মানুষের বসবাসের উপযোগী রাখতে নগর উন্নয়নে যুগোপযোগী উদ্যোগ নিতে হবে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি নগরায়ণ হচ্ছে উত্তর আমেরিকায়। সেখানে বর্তমানে ৮২ শতাংশ মানুষ নগরে বসবাস করে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ। সেখানে ৮০ শতাংশ লোক নগরে বাস করে। সেই তুলনায় আফ্রিকা ও এশিয়ায় নগরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কম, যথাক্রমে ৪০ ও ৪৮ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ কোটি লোক নগরে বসবাস করে। ২০২০ সালে শতকরা ৫০ ভাগ অর্থাৎ সাড়ে আট কোটি লোক নগরে বাস করবে এবং ২০৫০ সালে ১০০% অর্থাৎ ২৭ কোটি লোক নগরে বসবাস করবে। তখন গ্রাম ও নগর মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। এমন প্রেক্ষাপটে নগরকে পরিকল্পিত আকারে গড়ে তুলতে হবে। শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তাই, ছাদে বাগান সৃজন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। বাড়ির খালি ছাদে অথবা বেলখনিতে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল, শাক-সবজির বাগান গড়ে তোলাকে ছাদ বাগান বলে। অতি প্রাচীন সভ্যতা থেকে ছাদ বাগানের ইতিহাস দৃষ্টি গোচর হয়। ছাদে বাগানের প্রথম ধারণা এসেছিল আজ থেকে প্রায় ৩০০০ বছর আগে। মেসোপটেমিয়ায় রাজা নেবুচাঁদনেজার তার স্ত্রীর জন্য ইউফ্রেটিস নদীর তীরে প্রথম ব্যাবিলনের ঝুলন্ত- উদ্যান তৈরি করেন। সেই থেকেই ছাদ বাগানের প্রথম ধারণা এসেছিল। এখন মানুষ নিজ বাড়ি বা দালানের কার্নিসে, বারেন্দায় কিংবা ছাদে বাগান করছেন। বিশ্বব্যাপী নগরায়ন বাড়ছে ফলে শহুরে কৃষি নামক এক নতুন শব্দ আমাদের শব্দ ভান্ডারে যুক্ত হয়েছে। এ কৃষির শুরুটা শৌখিন হলেও তার অন্তরালে লুকিয়ে আছে একটি অমিত সম্ভবনার স্বপ্নপুরী। ছাদ বাগানের মারফতে ব্যাপক বাণিজ্যিক উৎপাদন করা অধিকাংশে সম্ভব না হলেও এটি পারিবারিক নিরাপদ পুষ্টি চাহিদা পূরণের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তাছাড়াও শহরে বসবাসরত কিশোর ও বৃদ্ধদের হাল্কা পরিশ্রমের মাধ্যমে মনের খোরাক ও সময় কাটানোর জন্য অন্যতম গুরুত্বর্পূণ উপাদান হয়ে উঠেছে। বিশ্বের কম বেশি দিন দিন ছাদ বাগানের গুরুত্ব বাড়ছে। শহরাঞ্চলে ছাদ বাগানের মাধ্যমে ফুল, ফল ও সবজির পারিবারিক বাগান এখন আর শৌখিনতার প্রতীক নয় বরং পরিবেশ রক্ষা ও নির্মল বায়ু উৎপাদনের জীবন্ত কারখানা। পরিবেশ রক্ষা আর নগরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে অনেক দেশে বাড়ির ছাদ, বারান্দা, গাড়ি রাখার বারান্দা, ফুটপাত, পার্ক, সরকারি খাস ভূমি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতিটি পর্যায়ে কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে উদ্যান ফসল ও বাহারি ফুল গাছের সমন্বয়ে তৈরি করা হচ্ছে সবুজ নগরায়ন। বাংলাদেশেও ছাদ বাগানের মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে শহরে সবুজায়ন শুরু হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে নয় বরং একান্ত ব্যাক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশে ছাদ বাগানের সূচনা। শহরে ছাদ বাগান স্থাপন করা হলে শহরের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রী পর্যন্ত কমে আসবে। আমাদের শহরগুলোতে মাটির অস্তিত্ব দিন দিন কমে আসছে। ইট-কাঠের ভবনের বদলে দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছে ইস্পাতের কাঠামো ও কাঁচে মোড়ানো বহুতল ভবন। বিশেষ করে জানালায় কাঁচ ও বানিজ্যিক ভবনের টেকসই স্থাপনার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে হালকা কিন্তু শক্তিশালী ধাতব পাত, ফাইবার ও গ্লাস। র্সূয থেকে তাপ ও আলো এ ধাতব ও কাঁচের কাঠামোর একটিতে পড়ে অপরটিতে প্রতিফলিত হয়। বারংবার প্রতিফলনের দরুন সে নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা আশপাশের এলাকার তুলনায় বেড়ে যাচ্ছে এবং শহরজুড়ে তৈরি হচ্ছে অসংখ্য হিট আইল্যান্ড বা তাপ দ্বীপ। ভবনে বা এর কাঠামোতে বাগান স্থাপন করা হলে বাগানের গাছের পৃষ্ঠদেশ এ তাপ চুষে নেয় এবং গাছের দেহ থেকে যে পানি জলীয়বাষ্প প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে যায় তা সে নির্দিষ্ট স্থানের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রী কমিয়ে আনতে পারে। অসংখ্য ছাদ বাগান বা শহুরের গাছপালা এ প্রক্রিয়ায় শহরের উচ্চ তাপমাত্রাকে কমিয়ে আনতে পারে। তাই সজীব নির্মল বায়ু ও উচ্চ তাপমাত্রা রোধে ছাদ বাগানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য